শিশুদের একাকিত্বের বিরূপ প্রভাব
সিফাত তন্ময়
যুগের প্রয়োজনে, জীবিকার তাগিদে, মানুষের জীবন-যাপন প্রকৃতির পরিবর্তনে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে দ্রুত বাড়ছে ছোট পরিবার। সংসারে সচ্ছলতার প্রয়োজনে বাবা-মা দুজনেই চাকুরী কিংবা কাজ করছে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে। নাগরিক জীবনের এই ব্যস্ত বাস্তবতায় দিনের এক দীর্ঘ সময় বাবা-মার সান্নিধ্য বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিশু-কিশোর। দুরন্তময় শৈশবের কোন উচ্ছ্বলতা নয়, একাকীত্বকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠছে এই শিশু-কিশোরেরা । একাকিত্ প্রসঙ্গে কয়েকজন শিশু-কিশোর জানায়,
‘‘ আমার বাবা-মা যখন থাকে না, তখন আমার খুব খারাপ লাগে। ইচ্ছে করে, বাবা-মায়ের সাথে বেশি সময় কাটাতে।
‘‘ আব্বু-আম্মু যখন বাইরে থাকে, তখন নিজের পছন্দ মতো কাজ করি। তাদের মিস করি। ’’
রাজধানীর ৮ শতাংশ শিশু বেড়ে উঠছে একাকিত্ব নিয়ে। শিশুদের বেড়ে উঠার পরিবেশ এবং জীবনাচার নিয়ে সম্প্রতি বেসরকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনি তথ্য। ঢাকার দুটি সরকারী এবং দুটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৪৫১ জন শিক্ষার্থীর পরিচালিত এই সমীক্ষায় আরোও বলা হয়, ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের ৮ শতাংশ একাকী থাকতে পছন্দ করে, যার সংখ্যা ৩২ লাখ। সময়মতো খাবার খায় না ৭৪ শতাংশ। পড়ার টেবিল, বই খাতা গুছিয়ে রাখে না ২২ শতাংশ। দাঁত ব্রাশ করে না ৪ শতাংশ, শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করে না ৫৯ শতাংশ, কাপড়-চোপড় নিজে পরিস্কার করে না ৫৯ শতাংশ, মা-বাবার কাজে সহযোগিতা করে না ১৮ শতাংশ। এ বিষয়ে, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ড. লেলিন চৌধুরী জানান,
‘‘ আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে দেখেছি, এদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রাসী মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ভীত যে, এদের বড় একটি অংশ নেশা জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে যাবে। অপরাধ জগতের দিকে যাবে। হতাশাগ্রস্থ হতে হতে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসবে।’’
বিশেজ্ঞদের মতে, শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগবে একাকিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠা শিশুরা। এই নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মোঃ জিল্লুর রহমান জানান,
‘‘ শিশুদের সময় যদি না দেওয়া হয়, তাহলে তার আচরণগত সমস্যা দেখা দিবে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিবে। একাকীত্ব, বিষন্নতা, উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ এবং
অনেক সময় অস্বাভাবিক আচরণ, উত্তেজনাসহ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিবে।’’
সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা এবং জীবিকার তাগিদে কাজের জন্য ছুটে চলা বাবা-মায়েদের সন্তাদের একাকিত্ব প্রসঙ্গে দুশ্চিন্তা এবং আক্ষেপ ছাড়া করার যেন আরো কিছুই নেই।
চাকুরীজীবী কয়েকজন বাবা-মা বলেন,
‘‘ বাচ্চদের বাসায় রেখে যাই, কাজের মানুষের কাছে। যখনই বাইরে যাই, তখনই চিন্তা থাকে মনের মধ্যে বাচ্চারা কি করছে।”
‘‘ সময় অনেক সময় দিতে পারি, অনেক সময় পারি না। যদিকেটু বেশি সময় দিতে পারতাম তাহলে তার মানসিক বিকাশ ও লেখাপড়া আরোও ভালো হতো।’’
শিশু-কিশোরদের একাকিত্ব রোধে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নেওয়া এবং লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ করে দেওয়ার পরামর্শ বিশিষ্টজনদের।
প্রতিক্ষণ/এডি/এস. টি.














